Pages

Thursday, June 7, 2012

শুক্র গ্রহের পরিক্রমণ

সূর্যের সামনে দিয়ে শুক্র গ্রহের পথ-পরিক্রমণের বিরল দৃশ্য গতকাল বুধবার উপভোগ করেছে বিশ্বের মানুষ। এ ধরনের দৃশ্য আবার দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১০০ বছরের বেশি সময়। 
উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অংশে গত মঙ্গলবার গ্রিনিচ মান সময় ২২০০টার কিছুক্ষণ পর এ দৃশ্য শুরু হয়। এ সময় সূর্যের পৃষ্ঠদেশে শুক্র গ্রহকে একটি ছোট্ট কালো বিন্দুর মতো দেখায়।
শুক্রের পরিক্রমণের এ দৃশ্য পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও দৃশ্যমান ছিল। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেকেই তা দেখতে পারেনি। 
আকাশ একেবারে পরিষ্কার থাকার কারণে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এ দৃশ্য ভালোভাবে দেখা গেছে। কুয়ালালামপুরের জাতীয় মানমন্দিরে এ দৃশ্য দেখতে হাজির হন জং জি কিয়ান। তিনি বলেন, ‘এটা জীবনে একবারই পাওয়ার মতো বিষয়। আপনি যদি এটাকে মিস করেন, তবে ২১১৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই লোকজন এটা দেখতে আসতে খুবই অধীর।’
বিশ্বের যেসব জায়গায় শুক্রের পরিক্রমণের দৃশ্য খুব ভালোভাবে দেখা গেছে, তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। দেশটির পূর্বাঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় অঞ্চল পর্যন্ত টানা প্রায় সাত ঘণ্টা এ দৃশ্য দেখা গেছে। খারাপ আবহাওয়া যদিও এ দৃশ্য দেখতে অনেকের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তার পরও সিডনি অবজারভেটরিতে টিকিট কেটে এ দৃশ্য দেখতে যায় প্রায় দেড় হাজার লোক। 
দৃশ্যটি এবার প্রথম দেখা যায় উত্তর আমেরিকায়। আর সবশেষে দেখা যায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে জড়ো হয় ৬০০ লোক। সেখান থেকে নাসার বিজ্ঞানী রিচার্ড ভনডার্ক বলেন, ‘প্রত্যেকেই একটা দারুণ সময় পার করেছে!’
চোখের ক্ষতি এড়াতে শুক্রের সূর্য ও পৃথিবীর মধ্য দিয়ে অতিক্রমের এ দৃশ্য কেবল অনুমোদিত সৌর ফিল্টার ব্যবহার করে দেখার জন্য আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ শুক্রের এ পরিক্রমণ অস্ট্রেলিয়ার কাছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। কেননা, ১৭৬৯ সালে গ্রহটির পরিক্রমণ ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন জেমস কুকের দক্ষিণের এ মহাদেশ ‘আবিষ্কারে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে বছর ক্যাপ্টেন কুক পরিক্রমণের দৃশ্য পর্যবেক্ষণে একটি বিশেষ জাহাজে করে বেরিয়ে পড়েন। সফলভাবে তা করার পর তাঁকে ‘গ্রেট সাউথ ল্যান্ড’ অন্বেষণে পাঠানো হয়। ধারণা করা হতো, প্রশান্ত মহাসাগরে এটার অস্তিত্ব রয়েছে। ওই যাত্রার সময় তিনি সত্যিই অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে পৌঁছে যান। এ ঘটনার পর ১৭৭০ সালে ব্রিটিশরা মহাদেশটির ওপর তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করে।
বিজ্ঞানীদের হিসাবে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫০ বারের বেশি শুক্র গ্রহের এ পরিক্রমণ সংঘটিত হয়েছে। তবে এর আগে শুধু ১৬৩৯, ১৭৬১, ১৭৬৯, ১৮৭৪, ১৮৮২ ও ২০০৪ সালে তা প্রত্যক্ষ করার উল্লেখ রয়েছে।

No comments:

Post a Comment